সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল করতে হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে তিনি এই আর্জি জানান। বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেয়া হয়েছিল। আমরা গণভোটের এই বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশি রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন তাদের ভোটে এই বিধান বাতিল হয়।
এদিকে দুপুরে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার রুল শুনানিতে পঞ্চদশ সংশোধনী সরাসরি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করেছে। এই সংশোধনী বাতিল না হলে ৯০ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মাহুতি দিয়েছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে না।
তিনি আরও বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়েছে।
মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ফ্যাসিজম দীর্ঘায়িত হয়েছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হয়েছে। ক্ষুণœ হয়েছে সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে হবে।
সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র, জাতির পিতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মতো কিছু বিষয় বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান।
এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা না যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলায় আসামি করা হবে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই, এ রকম মানুষকে আসামি করে বলা হয়েছে, তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধানের ৭ খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র না। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন করা হয়েছে-তার (শেখ মুজিব) বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী।’
সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা বলেন, এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না। ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
অনুচ্ছেদের ৮-এর বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটা রাখার দরকার নেই। এই দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আলাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ ক-তেই বলা আছে, রাষ্ট্র সকল ধর্ম পালনে সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর কথা বলা হয়েছে। এটি সাংঘর্ষিক।
এ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে আরও বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। কেন পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? এটা সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’২৪ এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।